কানাডায় নতুন যারা আসবেন/আসছেন

কানাডায় পাড়ি জমানো নতুনদের সবাইকে জানাই সু-স্বাগতম। জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। বসবাস, পড়ালেখা, ঘুরতে আসার জন্য উপযুক্ত এই সুন্দর দেশটা। এই লেখাটা মূলত নিউকামার ইমিগ্র্যান্টদের জন্য, যারা কানাডায় ল্যান্ড করবার জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছেন বা সদ্য এসেছেন।

নতুনরা অন্তত প্রথম চার মাস চলার মতো টাকা সাথে নিয়ে আসলে ভালো। প্রাথমিকভাবে একটা ছোট চারজনের পরিবারের মাসিক খরচ ২০০০ থেকে ৪০০০ ডলার হতে পারে [অবশ্যই ভিন্নতা/কমবেশি হবে শহর/স্থানভেদে, ব্যক্তি বিশেষ আর তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী। এটা একটা উদাহরণ মাত্র] এখানে সেরকম আত্মীয়স্বজন/বন্ধু না থাকলে এসে প্রথমেই একজন সমাজকর্মীর সহায়তা নিন। তিনি বিভিন্ন দিক দেখিয়ে দেবেন, বিনামূল্যে আপনাকে সহায়তা দেবেন। তাছাড়া এয়ারপোর্টে ইমিগ্র্যাশন অফিস আপনাকে গাইডেন্স, বুকলেটস দিয়ে দেবে। আপনি প্রাথমিক তথ্য পাবেন ওখানেই।

মোবাইল, ইন্টারনেট
===============
প্রথমেই একটা মোবাইল নাম্বার নিয়ে নিন। মাসে ২৫ থেকে ৪০ ডলারের মধ্যে পাবেন। তাছাড়া আপনার প্রয়োজন মোতাবেক ইন্টারনেট নিতে পারেন মাসে ৪০-৮০ ডলারের মধ্যে।
খাবার
=====
এখানে বড় শহরগুলিতে সব ধরণের খাবার, মশলা পাওয়া যায়। খামোখা বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসার কোনো যুক্তি নাই। মা বাবা ভালোবেসে বেঁধে দিলে আলাদা কথা। হালাল দোকানের অভাব নাই। এমনকি বাংলাদেশী মাছ, সবজি, মশলা, চাল, গুড়, পান, ফলমূল নিয়মিত বাংলা দোকানে ইম্পোর্ট হয়ে আসে।
তথ্য সংগ্রহ
=========
২১১ নাম্বারে কল করে যেকোনো সোশ্যাল সার্ভিস, বাংলাদেশী কমিউনিটিতে যোগাযোগ করার তথ্য জেনে নিন নির্দ্বিধায়। ৩১১ এ কল করে সরকারি যেকোনো সংস্থার ঠিকানা/সহায়তা পেতে পারেন। তাছাড়া BCS অফিস এ [বাংলাদেশী কানাডীয়ান কমিউনিটি সার্ভিসেস] এ কল দিলে তারা হেল্প করবে। গুগল করুন শহর অনুযায়ী। BCCB তে সদস্যপদ হয়ে আসবেন ফেসবুকে। সেখানে অনেক উপকারী তথ্য পাবেন। এছাড়াও বেশ কিছু ফেইসবুকভিত্তিক গ্রূপ থেকে সহায়তা পাবেন।
আবাসন
=======
কানাডায় এখন বাড়ি ভাড়া আকাশচুম্বী। তাই পুরানাদের চাকচিক্য অবস্থার দিকে না তাকিয়ে নিজের সাধ্য মতো থাকবেন। আপনারও ভালো সময় আসবে একদিন।

এখানে অধিকাংশ পত্রিকাই ফ্রি। বাংলাদেশী কমিউনিটিতে থাকার প্ল্যান থাকলে বাংলা দৈনিক দেখে বাসা খুঁজে নিন। হাউজ-এ এক রুম এর বেজমেন্ট ৯০০ থেকে ১২০০ ডলারে পাবেন। অধিকাংশ বেজমেন্টে মালিকগণ ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ, পানি, আর লন্ড্রী সহ এই ভাড়া হিসাব করেন। আবার ব্যতিক্রম আছে। তবে মেইন ফ্লোরে ভাড়া অনেক বেশি।
.
আর যদি বড় বিল্ডিং এপার্টমেন্ট এ থাকতে চান, তাহলে এক রুমের এপার্টমেন্ট এর জন্য ১২০০ থেকে ১৬০০ ডলার গুনতে হবে মাসে [ শহর ভেদে ভিন্ন হবে ] ২ রুমের জন্য আরো ৩০০ – ৫০০ ডলার যোগ হতে পারে। সাথে বিদ্যুৎ, পার্কিং আর ইন্টারনেট বিল দিতে হবে।

মনে রাখবেন আপনার এবিলিটির ওপর থাকবেন। প্রথম প্রথম সবাই এখানে কষ্ট করেই থাকে। অনেকেরই একটা অভ্যাস আছে, বেজমেন্ট দেখলে তাচ্ছিল্য করেন। এটা একদম ঠিক নয়। সবার এবিলিটিকে রেস্পেক্ট করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে আসার আগেই কারও মাধ্যমে অন্তত প্রাথমিকভাবে বাসা ঠিকঠাক করে আসবেন। পত্রিকায় ব্যাচেলরদের জন্যও রুম/শেয়ার-রুম অ্যাড থাকে।
.
** মনে রাখবেন, কানাডায় এক রুমের বাসা/এপার্টমেন্ট মানে একটা বেড রুম থাকবে; সাথে একটা ড্রয়িং রুম আর কিচেন, বাথরুম থাকবে।
** সব বাসাগুলোতে রান্নার চুলা, ফ্রিজ দেয়া থাকে। আপনাকে এগুলো কিনতে হবে না। হিটিং সিস্টেম থাকবে।
** হাউজ বলতে সাধারণত ছোট ছোট কাঠের বাড়িগুলোকে বুঝায়।
** বিল্ডিং এপার্টমেন্ট বলতে সাধারণত বড় বড় কংক্রিটের মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিঙের বাসাগুলোকে বুঝায়।
** বেসমেন্ট হলো বাসাবাড়ির নিচতলা।
.
বাচ্চাদের স্কুল
==========
খুব সম্ভব আপনার বাসার আশেপাশেই স্কুল পেয়ে যাবেন। কর্তৃপক্ষ আপনার বাচ্চাকে বয়স অনুযায়ী ক্লাস/গ্রেডে ভর্তি করে নেবে। দুশ্চিন্তা করবেন না। তবে বাংলাদেশ থেকে আসার আগে ডাক্তারের কাছ থেকে বাচ্চার যাবতীয় ভ্যাকসিন/টিকার রেকর্ড সাথে নিয়ে আসবেন।

ট্রান্সপোর্ট
========
কানাডার অধিকাংশ বড় শহরগুলোয় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ভালো মানের। প্রাথমিকভাবে আপনার ব্যক্তিগত গাড়ির প্রয়োজন হবে না। বাসে করেই শহরের যেকোনো জায়গায় যাবেন অনায়াসে। তবে শহর ভেদে সুবিধা কমবেশি থাকবে। তবে কান্ট্রি সাইডে/গ্রামের দিকে থাকতে হলে গাড়ি দরকার I এখানে কাউকে ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে আগ্রহ ভরে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে। পরিচিত কারো কাছ থেকে জেনে নিন/গুগল করুন কিভাবে যাবেন।

SIN, হেলথ কার্ড, PR কার্ড, ব্যাঙ্ক একাউন্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স
============================================

আপনাকে SIN [Social Insurance number] নিতে হবে। এটা ৯ ডিজিটের একটা নাম্বার। চাকরি পাওয়া, সরকারি/বেসরকারি অনেক ধরণের কর্মকান্ডে এটা প্রয়োজন। যোগাযোগ: গুগল করুন Service Canada অফিস, প্রয়োজনে ফোন করুন। আপনাকে স্বশরীরে উপস্থিত হতে হবে।
হেলথ কার্ড/চিকিৎসা
…………………………..
এদেশে ডাক্তার দেখাতে হলে হেলথ কার্ড থাকতে হবে। তা না হলে আপনাকে টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখাতে হবে। হেলথ কার্ড পেতে প্রায় তিন মাস সময় লাগতে পারে [শহরভেদে কম বেশি হবে]। এদেশে অধিকাংশ চিকিৎসা ফ্রি [চোখ আর দাঁত-এর ব্যাপারে রেস্ট্রিকশন আছে ] যোগাযোগ প্রভিন্সিয়াল অফিস: যেমন- Service Ontario office [অন্টারিও প্রভিন্সের জন্য]. আপনাকে ওখানে গিয়ে এপলাই করতে হবে। হেলথ কার্ড পাবার পর পারিবারিক ডাক্তার খুঁজে নিন বাসার আশেপাশে। প্রাথমিকভাবে ওখানেই ডাক্তার দেখাতে হবে। তবে ইচ্ছা করলে আপনি হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে গিয়েও চিকিসা নিতে পারেন। রেস্ট্রিকশন নেই।

PR [পার্মানেন্ট রেসিডেন্স] কার্ড
…………………………………………
যোগাযোগ Service Canada Office. এখানেও প্রায় ২-৩ মাস সময় লাগতে পারে। প্রভিন্স হিসাবে ভিন্নতা আছে। আপনি কানাডায় ল্যান্ড করার পর এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন অফিসে যে বাসার এড্রেস দেবেন, সেই ঠিকানায় কার্ড পাঠানো হবে। তবে এড্রেস পরিবর্তন করলে অবস্যই দ্রুত জানাবেন অফিসে।
.
ব্যাংক একাউন্ট
…………………..
.
আপনার পছন্দমাফিক যেকোনো ব্যাঙ্ক-এ গিয়ে উপস্থিত হউন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে। এটা খুবই জরুরি। TD, RBC, CIBC, BMO, SCOTIA ইত্যাদি যেকোনো ব্যাংকএ গেলে তারা আপনাকে সহায়তা দিয়ে আগ্রহভরে একাউন্ট খুলে দেবে। নিউকামারদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে।
.
ড্রাইভিং লাইসেন্স
……………………….
.
দেরি না করে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর প্রসেসিং শুরু করে দিন। উদাহরণস্বরূপ-যোগাযোগ: SERVICE ONTARIO . আপনি গাড়ি কিনুন বা না কিনুন, এটা একটা অপরিহার্য V.I.আইডি। আপনাকে গাড়ি চালাতে পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্স নিতে মোট তিনটা পরীক্ষা দিতে হবে [এখানে অন্টারিও প্রভিনসেরটা বলা হলো। প্রভিন্স ভেদে ভিন্ন হবে] :
.
১. জি-১ [লিখিত পরীক্ষা। টিক মার্ক]
.
২. জি-২ [জি-১ পাশ করার এক বছর পরে এই পরীক্ষা দিতে পারবেন। আপনাকে প্রেক্টিক্যালি ড্রাইভ করে পরীক্ষা দিতে হবে; এক্সামিনারকে সাথে নিয়ে। উনি মার্কিং করবেন। এই অংশে কোনো লিখিত পরীক্ষা নাই।
.
৩. জি (পূর্ণাঙ্গ) [ জি-২ পরীক্ষায় পাশ করার পর এই “জি” ড্রাইভিং পরীক্ষা দিতে হবে। এখানেও আপনি গাড়ি চালাবেন এক্সামিনারকে সাথে নিয়ে, অনেকটা জি-২ পরীক্ষার মতো, তবে আরও বড়/জটিল রাস্তায়। আরও প্রফেশনালভাবে চালাতে হবে]

*** জি-২ পাশ করার পর আপনি গাড়ি চালাতে পারবেন, সামান্য কিছু রেস্ট্রিকশন ছাড়া। তবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনাকে অবশ্যই জি লাইসেন্স নিতে হবে।
.
.
ফার্নিচার
========
.
প্রাথমিকভাবে আপনি ফার্নিচার ব্যাঙ্ক থেকে শর্তসাপেক্ষে প্রায় বিনামূল্যে ফার্নিচার নিয়ে আসতে পারেন। [এই সুবিধা সব শহরে নাও থাকতে পারে] পরিবার হিসাবে একটা লিমিট দেওয়া থাকে। তবে ট্রাক ভাড়া আপনাকে দিতে হবে। সমাজকর্মীর সহায়তা নিন। তাড়াহুড়া করবেন না, ধীরে সুস্থে কিনতে থাকুন পরবর্তীতে। তবে পুরাণ ম্যাট্রেস /বক্স ঘরে তোলার আগে চেক করে নিন ছাড়পোকা /তেলাপোকা আছে কি না।
.
জামা-কাপড়
==========
.
ওয়ালমার্ট, ওল্ড নেভি, গাপস, উইনার্স, অশ-খশ ইত্যাদি বিভিন্ন দোকান থেকে নতুন জামাকাপড় কিনতে পারেন। আর পুরানা/ব্যবহৃত জামাকাপড় কিনতে পারেন থ্রিফট (THRIFT) স্টোর থেকে। সেখানে বেশ কম দামে ভালো জিনিষও মেলে। গুগল এ থ্রিফট ষ্টোর লিখে সার্চ দিয়ে এড্রেস জেনে নিন।
.
সোশ্যাল সার্ভিস/ অ্যাসিস্ট্যান্স
=======================
.
আপনি যদি নিতান্তই আপনার আর্থিক ব্যয় মিটাতে অক্ষম হন, তাহলে সমাজকর্মীকে খোলাখুলি বলুন। সবই কনফিডেন্সিয়াল/গোপনীয়। আপনি নিজেও গুগল-এ Social Assistance Canada সার্চ দিয়ে তথ্য নিতে পারেন। প্রভিন্স ভেদে নামের ভিন্নতা আছে। সরকার থেকে একটা সহায়তা পেতে পারেন, যদি তা পাবার যোগ্য হন। ভয় নেই, কানাডায় কেউ না খেয়ে থাকে না।

যত দ্রুত পারা যায় চাইল্ড বেনিফিট এর জন্য এপলাই করে ফেলবেন।
.

চাকরি/পড়াশোনা
==============
.
EMPLOYMENT সেন্টারগুলোতে যোগাযোগ করুন। সেখানে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার, টেলিফোন, প্রিন্ট, ফ্যাক্স পেতে পারেন। তারা প্রাথমিকভাবে চাকরি পাবার একটা পথ বাতলিয়ে দিতে সহায়তা করবে। পড়াশোনার ব্যাপারেও সহায়পতা করবে। আর আপনার সিভি/রেজিউমি বানাতেও অনেক সহায়তা করবে। মনে রাখবেন কানাডার সিভি/রেজিউমি বাংলাদেশের থেকে সম্পূর্ণই আলাদা। তাই ভালোমতো কানাডিয়ান চাহিদা মোতাবেক ঠিক-ঠাক না করে কোথাও এপলাই করে লাভ নেই। তবে সারভাইভাল জব পেতে চাইলে সরাসরি সেই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সিভি দিয়ে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে সিভি নাও লাগতে পারে, শুধু ফর্ম ফিলাপ লাগতে পারে।
.
পড়াশোনা করার জন্য কানাডা স্বর্গ। আর কানাডিয়ান ডিগ্রি মানেই ভালো চাকরির সম্ভাবনা। জীবন গড়ে তুলবার জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। ভালো জব পাবার সব ব্যবস্থা করে রেখেছে সরকার। আপনি সেভাবে এগুলে সফল হবেন তাতে কোনো সন্দেহ নাই। অনেকেই তড়িঘড়ি করে সারভাইভাল জবে ঢুকে আর বেরুতে পারে না। মনে রাখবেন সারভাইভাল জব মানেই সেটা বছরের পর বছর কন্টিনিউ করা নয়।
.
.
খুবই গুরুত্বপূর্ণ
++++++++++++
.
*** অপরিচিত কাউকে ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না

*** জন্মতারিখ, পোস্টাল কোড, ফোন নম্বর অপরিচিত মানুষের কাছে শেয়ার করবেন না

*** দুষ্টু লোক ফোন করে কৌশলে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়ে বিপদে ফেলতে পারে

*** আপনি নিজে ফোন করে বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে তথ্য দিতে পারেন, কিন্তু কেউ কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম করে আপনাকে ফোন করলে নিশ্চিত না হয়ে কোনো তথ্য দেবেন না

*** কানাডায় আপনার নিজস্ব একটা ঠিকানা খুবই জরুরি

*** মনে রাখবেন ভয়ভীতি দেখিয়ে ফোন করে টাকা চাওয়া মানেই “ফ্রড কল”

আর সুন্দর এই দেশটা ঘুরে দেখুন, উপভোগ করুন I পজিটিভ হউন। দেশে ফেলে আসা আপন মানুষগুলোও যেন বঞ্চিত না হয় আপনার অভিজ্ঞতা, সংস্পর্শ, সহায়তা থেকে। সবাইকে নিয়েই সার্থক হোক আপনার পথ চলা।

Courtesy: Zaved Iqbal

Source : https://www.facebook.com/zavedi1/posts/10157077262272860

Author: camigbd

Bangladeshi people who are interested to migration to Canada and want to share and discuss their related experiences are visit here.

Leave a comment